- 15 June, 2023
- 0 Comment(s)
- 267 view(s)
- লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
“ধর্ম (অর্থে religion) ও জাতি (অর্থে race) কখনই এক জিনিস নয়। প্রত্যেক ধর্ম আদতে কোনও এক বিশেষ ‘ভাবনা’ বা ‘ধারণা’র সমতুল। প্রত্যেক ‘ধারণা’ নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে (অথবা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে), তখনই – যখন কি না সে বিরুদ্ধ সমালোচনার আঘাতকে সহ্য করার মতো সহনশীলতা (অথবা সহ্য করতে না পারার মতো দুর্বলতা)-র পরিচয় দিয়েছে। সমালোচনার হাত থেকে লুকিয়ে তারা বাঁচতে পারেনি। শক্তিমান ‘ধারণা’গুলি সবসময়েই সমালোচনার আক্রমণকে স্বাগত জানিয়েছে।” – সলমন রুশদি, ‘জোসেফ আন্তন’, ২০১৩
তাঁর জন্মদিন আসন্ন। বিশেষ করে নারীবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে সলমন রুশদির কোনও নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে, বা সেই বিষয়েই আলোচনা করতে চাইব – এমনটা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু রুশদিকে নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন কারণ, তিনি মুক্ত চিন্তার কথা বলেছেন। বাকস্বাধীনতার কথা বলেছেন। তদুপরি, বিশেষ যে ধর্মের প্রাগৈতিহাসিক আস্ফালনের বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছেন, (এবং তারই জন্য আজীবন চরমের চেয়েও চরম মাশুল গুনে এসেছেন) নারীকে অবদমিত করে রাখার ক্ষেত্রে গোটাগুটি ভাবে এবং সাম্প্রতিক ভাবেও সেই মৌলবাদী ইসলামের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। যদিও, নারীকে দমনের ক্ষেত্রে কেবল ইসলাম নয়, প্রত্যেক প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই কোনও না কোনও ভাবে নিজেদের ‘অবদান’ রেখেছে। কাজেই এমন প্রত্যেক ‘ধর্ম’ বা ‘ধারণা’র বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা উচিত। প্রত্যেক মানবাধিকার কর্মী ও প্রত্যেক নারীবাদীরই সেই বিষয়ে সরব হওয়া উচিত।
সম্প্রতি হায়দ্রাবাদ থেকে ফিরেছি। হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত চারমিনারের কাছেই যে মক্কা মসজিদ, আগেও সেই মসজিদ চত্বরে গিয়ে বসতে ভালো লাগত। একইরকম ভালো লাগার অনুভূতি মিলত দিল্লির জামা মসজিদ চত্বরেও। পুরনো কোনও মন্দির, মসজিদ, বা গির্জার অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে কারণ – স্তব্ধ হয়ে সেই স্থাপত্যের সৌন্দর্য ও বিশালত্বটুকুকেই অপার শ্রদ্ধার সাথে অনুভব করি। অনুভব করি ঈশ্বর নয়, মানুষেরই কীর্তিমানতাকে। সম্ভ্রম ও বিস্ময়ে নত হতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তারই মধ্যে যখন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের গোঁড়ামিকে হঠাৎ কোনও নগ্নতায় বেরিয়ে আসতে দেখি, তিক্ততায় তখন সরে আসতে ইচ্ছে হয়। ঠিক যে কারণে ২০১৯এর প্রথম দিকে যখন, অবাক বিস্ময়ে দিল্লির নিজামুদ্দিন ওয়েস্ট অঞ্চলে গালিব ও খুশরুর সমাধিতে গিয়েছিলাম, অনেক রাত্তিরে কেমন যেন ঘিঞ্জি, অস্বস্তিকর, দমচাপা অবস্থায় বিব্রত বোধ করেছিলাম। কবির সমাধিতে কবির ধর্মবিশ্বাস যদি বা তাঁর কবিতার চেয়েও বড় হয়ে চেপে বসতে চায়, বড় অন্ধকার মনে হয় তখন। হয়তো এ আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। তবুও এই অভিজ্ঞতার কথা থেকেই শুরু করতে চেয়েছিলাম। কারণ, এরপরেই সেই সফরেরই অঙ্গ হিসেবে পরের দিনে ঘুরে দেখেছিলাম জামা মসজিদ, পার্শ্ববর্তী মিনা বাজারের আলোকোজ্জ্বল সম্ভার। সেও এক সন্ধ্যারই অভিজ্ঞতা।
যখন জামা মসজিদ চত্বরে পৌঁছেছিলাম, জানতাম না রাত্রি আটটার সময় মসজিদ চত্বর খুলে দেওয়া হবে। কাজেই প্রায়ান্ধকার ও প্রায় শূন্য মসজিদ চত্বরে ঢুকতেই, লাল পাথরের সেই বিরাট স্থাপত্য, ও তার চেয়েও বিরাট এক মন ভালো করে দেওয়া নিস্তব্ধতায় ডুব দিয়েছিলাম। অদূরে তাকিয়ে দেখেছিলাম, আকাশের গায়ে বিরাটতর প্রহরীসম লালকেল্লার রক্তিম সিল্যুয়েট। তারও প্রাকারগুলিতে আলো জ্বলে উঠেছে। কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও জামা মসজিদের মূল ফটকে আটকিয়ে রাখা এক নির্দেশনামার বক্তব্যকে কিছুতেই মন থেকে সরিয়ে দিতে পারছিলাম না। এবারের হায়দ্রাবাদ সফরেও সেই একই নির্দেশনামা চোখে পড়ল, মক্কা মসজিদ চত্বরেও। বিগত কিছু বছরে মেয়েদের অবস্থান, নারীর উপরে চাপিয়ে দেওয়া পোশাক ফতোয়া, আফগানিস্থান, ইত্যাদি নানা বিষয়ে লিখতে লিখতে কোথাও গিয়ে যেন মানসিকতায় আমিও খানিক পরিণত হয়েছি। কাজেই জামা মসজিদ চত্বরে যে লেখা দেখেছিলাম, মক্কা মসজিদেও সেই একই নির্দেশনামাকে চোখে পড়ল যখন, বিব্রত বা অস্বস্তির ভাবটা আরও যেন একটু বেশি করেই অনুভব করলাম। সোজাসাপটা কয়েকটি কথা কেবল,
“মহিলাদের হিজাব বা সমতুল মাথার কাপড় ও ওড়না না থাকলে মসজিদ চত্বরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। হাতখোলা জামা, টিশার্ট বা চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ।“
এমন লিখিত বা অলিখিত নির্দেশ যে অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও নেই এমনটা নয়। শিখ গুরুদ্বারগুলিতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক দর্শনার্থীকেই মাথায় কাপড় দিয়ে ঢুকতে হয়। প্রার্থনার সময় পুরুষ ও নারীর আলাদা বসার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এইখানেই কি তাহলে ফারাক ধরা পড়ে গেল? নারীকে অসম্মানের জায়গা তো কোনও শিখ ধর্মস্থানে কোনওদিন দেখিনি। মাথায় কাপড় পুরুষ বা নারী দুইজনকেই দিতে হয় সেখানে। ইসলাম ধর্ম বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু মসজিদ চত্বরে এমন নির্দেশনামার প্রতিক্রিয়া হিসেবে কেনই বা এতখানি অস্বস্তি বোধ করব? দোষ কি ইসলামের? নাকি ইসলামকে ভুল ভাবে ‘চাপিয়ে দিতে চাওয়া’ মোল্লাতন্ত্রের? গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে মোল্লাতন্ত্রকেই রুশদি কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন।
যদি আমরা হিন্দুদের দিকে চোখ ফেরাই, তাহলে দেখব দক্ষিণ ভারতের একাধিক মন্দিরেও কিন্তু মহিলাদের প্রবেশের বিষয়ে এমনই বিধিনিষেধ রয়েছে। শবরীমালা বিতর্কের রেশ এখনও টাটকা। তাছাড়া মনু সংহিতার যে একেকটি মারাত্মক শ্লোক স্বয়ং বিদ্যাসাগরের রচনাতেই ব্যাখ্যা-সহ উঠে আসতে পেরেছে, সেগুলির বিষয়েও যত কম কথা বলা যায়, ততই মঙ্গল। পুরীর জগন্নাথ মন্দির আবার এই বিষয়ে আরও এক কাঠি উপরে। সেখানে দলিত বা অহিন্দু কারোরই প্রবেশাধিকার নেই। এই কারণে যে সমস্ত মানুষকে জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি, সেই তালিকা দেখলে পরে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ১৯৩৪ সালে মুসলিম, দলিত, ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে নিয়ে গঠিত এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে চেষ্টা করলে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢুকতে দেওয়া হয়নি আচার্য বিনোবা ভাবের মতো মানুষকেও। পিরিলি ব্রাক্ষ্মণ হওয়ার কারণে ‘নীচুজাতের মানুষ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও জগন্নাথের দরবারে প্রবেশাধিকার মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী ও ব্রাক্ষ্মণ হয়েও, পার্সি ফিরোজ গান্ধীকে বিবাহের কারণে স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধীকেও এই মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এতকিছুর পর সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকরের ক্ষেত্রেও যে এই বিষয়ের কোনও অন্যথা হয়নি, সেও আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সময়গুলিতেই সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়ে সত্যজিৎ রায়ের কলমে সেই সংলাপ, ‘আগন্তুক’ মনোমোহন মিত্র যেমনটা বলেছিলেন, “যে জিনিস মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে তা (ধর্ম) আমি মানি না। ঠিক সেই একই কারণে আমি জাতও (অর্থে caste) মানিনা।”
এখানে আলোচনা উঠতেই পারে, সমস্যা কি তবে ধর্মের, নাকি শাস্ত্রের, নাকি পুরোহিত অথবা মোল্লাতন্ত্রের – যাঁরা কি না ধর্ম বা ঈশ্বরের স্বঘোষিত প্রচারক বা অনুবাদক হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করে থাকেন। কিন্তু এসব প্রশ্নকে সরিয়েও, উত্তরণ অথবা ধর্মের প্রাগৈতিহাসিক সমস্ত আচার অথবা কুসংস্কার, বা এমন সমস্ত অন্যায় ফতোয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আধুনিকতার পথে অগ্রগমন – এসবই কেবলমাত্র তখনই সম্ভব হবে, যখন কি না ধর্ম অথবা ধর্মের পুরোহিতেরা তাঁদের বিশ্বাস বা প্রথার বিরুদ্ধে সমালোচনার আক্রমণকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হবেন।
এই প্রসঙ্গে আবারও রুশদিতে ফিরতে চাইব। আধুনিক, বা প্রগতিশীল চিন্তার ক্ষেত্রে সমালোচনা বা সাহিত্যের একটি প্রধান উপাদান ব্যঙ্গ, comedy, বা satire। ইরানের আয়াতোল্লাহের ফতোয়ার পর রুশদিকে যখন দীর্ঘ নির্বাসনে কাটাতে হয়েছিল, এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইংরেজিতে বলেছিলেন, “আমার সবচেয়ে পছন্দের শব্দ হলো ‘comedy’, আর সবচেয়ে অপছন্দের শব্দ হলো ‘religion’।“ রুশদি বারবার যে কথা বলতে চেষ্টা করেছেন, “ধর্ম অথবা সমস্ত বিষয়ের ক্ষেত্রেই আমাদের প্রত্যেকের ব্যঙ্গের অধিকার রয়েছে, সমালোচনার অধিকার রয়েছে, ঐতিহাসিক ভাবে সেই ধর্ম বা অন্য যে কোনও বিষয়ের তুল্যমূল্য বিচারের অধিকার রয়েছে।" এই অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার, ভাষার জন্মগত অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্মগত অধিকার। আজকে দাঁড়িয়ে এই প্রসঙ্গে আমার একথা বলতেও কোনও দ্বিধা নেই, ব্রাক্ষ্মণ পুত্রসন্তান হিসেবে আমার উপনয়নের অধিকার ছিল। ছোটবেলায় আমি সেই অধিকার ভোগ করেছি। এজন্য আজ আমি লজ্জিত বোধ করি। নিজেকে অপরাধী বলে মনে করি। সেই অপরাধ বর্ণভেদের অপরাধ, সেই অপরাধ লিঙ্গভেদের উদযাপনকে মান্যতা দেওয়ার অপরাধ। ধর্মের নামে উৎসব যদি বা কখনও মানুষের মিলনের উৎসব হয়ে ওঠে, তার বিরোধিতা করার তো কোনও কারণ দেখি না। কিন্তু কোনও এক শিশুর শৈশবে, তাকে নিয়ে বিশেষ একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে পালন করা হবে কি হবে না, তা যদি তার পদবি ও লিঙ্গের উপর নির্ভরশীল হয়ে দাঁড়ায়, আমি সবার প্রথমে সেই আচারের বিরোধিতা করব।
ধর্ম মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। কিন্তু ওই যে বলে এলাম, সংকীর্ণতাই কোনও ধর্মের একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়। যে কারণে ১৯৯৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজের এক অনুষ্ঠানে, কলেজের গির্জায় pulpit বা পাদ্রীর স্থায়ী বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে সলমন রুশদি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, “এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার উপলব্ধি হচ্ছে ধর্মবিশ্বাসের সবচেয়ে সুন্দর প্রকাশ কেমন হতে পারে। এই গির্জা যেমন তারই উদাহরণ, তেমনই আমারই বিরুদ্ধে জারি হওয়া ইরানের আয়াতোল্লাহের ফতোয়া আদতে ধর্মবিশ্বাসের কদর্যতম প্রকাশ।“ ইসলামের কথা বলতে গিয়ে বারংবার চিন্তক ইবন রুশদের কথায় ফিরে গিয়েছেন সলমন। দ্বাদশ শতকের মুক্তমনা যে ইসলামিক চিন্তকের পদবির সূত্র ধরেই সলমনের পিতা আনিস, ‘রুশদি’ পদবি নিয়েছিলেন। ত্যাগ করেছিলেন পারিবারিক ‘দেহলভী’ পদবি। সলমন লিখেছেন, “ইবন রুশদের লড়াই ছিল ‘আক্ষরিক শাস্ত্রীয়’ ইসলামের বিরুদ্ধে, যুক্তিবাদী ধর্মের আধারে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার লড়াই। আজ স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য আমার যে লড়াই, তারও মধ্যে আমি সেই আটশো বছর আগেকার যুক্তিপ্রতিষ্ঠার লড়াইকেই প্রতিধ্বনিত হতে দেখছি।” নিজের লেখায় রুশদি দ্বর্থ্যহীন ভাষায় ঐতিহাসিক ভাবে ইসলামকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁর লড়াই ছিল ‘আক্ষরিক ইসলাম' বা মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যাঁরা নারীকে হিজাবে আবৃত রাখতে চায়। অথবা অন্য আরেকটি ধর্মে যেমন ভাবে পুরোহিতেরা মনুর সংকীর্ণতাকে চাপিয়ে দিতে চায় মেয়েদের সম্মানের উপর। এই মোল্লাতন্ত্র বা পুরোহিততন্ত্রের কারণে ধর্মের সৌন্দর্য হারিয়েছে। ধর্মের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। মানুষে মানুষে মেলবার বিপরীতে, মানুষে মানুষে আলাদা হবারই বার্তা প্রচারিত হয়েছে। তাই বোধহয় ‘ধর্ম’ শব্দটিকেও কোনও নতুন নামে চেনানোর সময় হয়েছে আজ। ধর্ম বা religion, মিলনের চেয়েও আজ বিভেদেরই বেশি পরিচায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিভেদ পুরুষের বিপরীতে নারীকে দাঁড় করিয়েছে, মানুষের বিপরীতে মানুষ, জাতের বিরুদ্ধে আরেকটি জাতের অস্তিত্বকে লড়ে যেতে দিয়েছে। এই সামগ্রিক ধারণারই বোধহয় আজ পরিবর্তন প্রয়োজন।
রুশদির কথা বারংবারে উল্লেখ করলাম, কারণ মনে হয়েছিল, ধর্মের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁর যে শাণিত যুক্তির প্রয়োগ, আমরা বোধহয় সেই থেকেই সমালোচনার ধারাটিকে শিখে নিতে পারি। প্রশ্ন করতে পারি প্রত্যেক মোল্লাকে অথবা পুরোহিতকে, কোন অধিকারে আপনারা আমাদের সমালোচনার অধিকারকে হরণ করে এসেছেন? আমরা প্রত্যেক ধর্মবিশ্বাসেরই ভালো অথবা খারাপ দিকগুলিকে নিয়ে প্রকাশ্যে, যথোপযুক্ত তীক্ষ্ণতা ও যুক্তির সঙ্গে সমালোচনার অধিকার চাই। এবং অধিকার চাই সামগ্রিক, সার্বিক সমদর্শীতার।
কোনও দেবতারই লাল চোখ যেন আমার ব্যক্তিস্বাধীনতার অহংকারের ঊর্ধে উঠতে না পারে। এই জগতে চিন্তাশীল সজীব বস্তু হিসেবে একমাত্র মানুষেরই অস্তিত্ব স্বীকৃত। পাথর অথবা অন্ধবিশ্বাসের কোনও দেবতাকে নিয়ে যারা সমাজে একনায়কত্ব কায়েম করতে চায়, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চিরকালীন।
0 Comments
Post Comment